শেখ গফ্ফার রহমান, স্টাফ রিপোর্টারঃ
পদ্মা সেতুর পিলারের নিচে ৬২ মিটার পর্যন্ত মাটি সরে যেতে পারে, এটা ধরে নকশা করা হয়েছে। পদ্মা সেতু রিখটার স্কেলে প্রায় আট মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয়। সেতুটি চার হাজার ডেড ওয়েট টনেজ (ডিডব্লিউটি) ক্ষমতার জাহাজের ধাক্কাও সামলাতে পারবে।
পদ্মা সেতুকে ভূমিকম্প সহনীয় করতে সর্বোচ্চ ক্ষমতার বিশেষ ধরনের বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে, যার নাম ‘ডাবল কারভেচার ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’। সবচেয়ে বড় বিয়ারিংটির ওজন ১৫ টন। মোট বিয়ারিং লেগেছে ৯৬ সেট। এগুলো পিলার এবং স্প্যানের মাঝখানে বসানো হয়েছে। এসব বিয়ারিং প্রায় এক লাখ টন ক্ষমতার কম্পন প্রতিরোধে সক্ষম।
কীভাবে ভূমিকম্প ঠেকাবে এর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রকৌশলীরা। তাঁরা বলছেন, ভূমিকম্প মাটিতে কম্পন সৃষ্টি করে। এই কম্পন প্রথমে পিলারে যাবে।বিয়ারিংগুলো এর কম্পন ক্ষমতা কমিয়ে দেবে। এ ছাড়া স্প্যানে ভূমিকম্পের সামান্য আঘাত গেলেও তা থেকে সেতুকে রক্ষা করার জন্য প্রতিটি জোড়ায় সংকোচন-সম্প্রসারণের বিয়ারিং বসানো হয়েছে।
বড় ভূমিকম্প থেকেও রক্ষা পাবে পদ্মাসেতু, পদ্মাসেতুর উপরের অংশের ওজন আসলে কত? পদ্মা সেতুর ওপরের কাঠামোর প্রতিটি স্প্যানের ওজন ৩ হাজার ২০০ টন। পুরো সেতুতে এমন স্প্যান আছে ৪১টি। ফলে সব মিলিয়ে স্প্যানের ওজন দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৩১ হাজার ২০০ টন। এর ওপর রেলের গার্ডার, দুই স্তরের কংক্রিটের স্ল্যাব বসানো হয়েছে। ফলে তা কয়েক লাখ টন ওজনের একটি স্থাপনা।
♥সব কাজ শেষ, পদ্মা সেতু বুঝে পেয়েছে সরকারঃ
শতভাগ নির্মাণ কাজ শেষে পদ্মা সেতুর দায়ীত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে সেতু কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। গত মঙ্গলবার প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সেতুর সব কাজ বুঝে নিয়ে ঠিকাদারকে ‘টেকিং ওভার’ সার্টিফিকেট দেয়। এরপর বুধবার ঠিকাদারের কাছ থেকে সেতুর দায়িত্ব বুঝে নেয় প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) সংবাদিকদের বলেন, “সেতুর সব কাজ শেষ, কিছু কিছু জায়গায় রঙ করা, সৌন্দর্যবর্ধনের মত কিছু কাজ শুধু বাকি রয়েছে, সেটা আজ ও কাল সকালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে পদ্মা সেতু বুঝিয়ে দিয়েছে।”
২০২৩ সালের ৩০ জুন এ প্রকল্প শেষ হবে। কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে বা সমস্যা হলে এই এক বছরের মধ্যে তা ঠিক করে দেবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুর কাজ শুরু করেছিল।
মূল সেতু, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া, জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনসহ ছয়টি ভাগে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ চলে। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার এই সেতু নির্মিত হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে; যদিও শুরুতে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার কথা ছিল এই সেতুতে।
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করলে তাদের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে দেশের টাকায় এই সেতু নির্মাণেরে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৫ সালে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল সেতুর নির্মাণযজ্ঞ শুরু হয়।
সেই কাজ শেষে আগামী শনিবার (২৫ জুন ২০২২) বহু প্রত্যাশার পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। পরদিন পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। তবে নদী শাসনের কাজ এখনও বাকি প্রায় ৭ শতাংশ। আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে সেই কাজ শেষ হওয়ার কথা। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার কাজও প্রায় ৪ শতাংশ বাকি।