কিছু কিছু ডিসি-ওসি নিজেদের জমিদার মনে করেন: হাইকোর্ট

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

শুনানিতে আদালত বলেছেন, নুসরাত জাহান রাফিকে নিরাপত্তা দিলে এ ধরনের ঘটনা হয়ত এড়ানো যেত। তার (পরিদর্শক মোয়াজ্জেমের) উচিৎ ছিল তাকে (নুসরাত) নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু ক্ষমতা থাকার পরও তা না করে ওই ছাত্রীর বক্তব্য ভিডিও রেকর্ড করে- তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। এ কাজ করে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন মোয়াজ্জেম।

দায়িত্ব বা ক্ষমতা থাকার পরও সে দায়িত্ব পালন না করার কারণে যদি কোনো দুর্ঘটনা বা অপরাধ ঘটে তবে সেজন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিও ‘সমান দায়ী’ বলে মনে করেন আদালত।

আদালতে মোয়াজ্জেমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসান উল্লাহ ও সালমা সুলতানা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

শুনানিতে ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী মো. আহসান উল্লাহ আদালতকে বলেন, তার (মোয়াজ্জেম) মোবাইল থেকে ভিডিওটি এক সাংবাদিকের হাতে চলে গেছে। সেখান থেকেই ভিডিওটি ছড়িয়েছে।

তখন আদালত বলেন, সাংবাদিকদের হাতে ভিডিওটি আগে গেলে তাকে (নুসরাত) মরতে হতো না।

এরপর শুনানি করতে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, সরকারি অফিসার হয়ে তিনি (মোয়াজ্জেম) ভিডিও করলেন, তা ভাইরাল হলো। তাকে জামিন দিলে জনমনে কী মেসেজ যাবে? তিনি অসুস্থ থাকলে জেল অথরিটি রয়েছে, তারাই তাকে চিকিৎসা করাবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিজনারস সেলে চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ আছে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ অফিসারদের এমন দায়িত্বহীন কাজ আগে দেখিনি। মেয়েটিকে যেসব প্রশ্ন করেছে- তা শোনা যায় না (অশ্লীল ভাষা)।

তখন আদালত বলেন, কিছু কিছু ডিসি ও ওসি আছেন যারা নিজেদের জমিদার মনে করেন। সর্বেসর্বা মনে করেন। সবাই কিন্তু না। অনেক দেশেই এমন আছে, তবে আমাদের দেশে বেশি। আদালত বলেন, মেয়েটি থানায় অভিযোগ করতে এলো। এজাহারের জন্য তাকে (নুসরাত) লিখিত বক্তব্য দিতে বললেই হতো। সেখানে এসব প্রশ্নের কোনো দরকার হয়? ওসির প্রশ্নগুলোর কোনো প্রসঙ্গ দেখি না।

মাহবুবে আলম বলেন, এখানে কোন প্রেক্ষাপট কাজ করছে? এসব প্রশ্ন করে মজা করবে আবার ভাইরাল করবে? একেবারেই দায়িত্বহীনতার কাজ করেছে।

আদালত বলেন, ঘটনা শুনে তার সহানুভূতি দেখানো উচিত ছিল। তখন যদি মেয়েটিকে নিরাপত্তা দেয়া হতো তাহলে এ ঘটনা এতদূর এগোতো না। এরপর আদালত মোয়াজ্জেমের জামিন আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।

আদেশের পর আহসান উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার সাইবার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের শুনানি আছে। সেখানে আমরা জামিন আবেদন করব। যদি ওইখানে আবেদনটি নামঞ্জুর হয়, তবে হাইকোর্টের অন্য কোনো বেঞ্চে আবার জামিন আবেদন করা হবে।

সোনাগাজীর মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা করার পর নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার আগে রাফি থানায় গিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন- তা মোবাইলে ভিডিও করে প্রচার করেছিলেন সোনাগাজীর তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম।

এ ঘটনায় ঢাকার আদালতে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন একজন আইনজীবী।

Please follow and like us: