একাত্তর ডেস্ক : যশোর জেলার অভয়নগর নওয়াপাড়ায় আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ভেজাল ও নকল ওষুধ তৈরির কারখানা আবিস্কার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব-৬)।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় র্যাব এ কারখানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান সেকনো নামের গ্যাসের ট্যাবলেট, নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরির মেশিন ও সরঞ্জামাদী, খালি মোড়ক ও নকল ওষুধ তৈরির কাঁচামাল জব্দ করেছে। নওয়াপাড়া পৌরসভার গুয়াখোলা গ্রামের এ আবাসিক এলাকায় ঢাকার জনৈক সাইফুল ইসলাম বসবাসের কথা বলে ঘর ভাড়া নিয়ে এ অপকর্ম চালিয়ে আসছিলো বলে র্যাব সূত্র জানিয়েছে। এসময় ভেজাল ও নকল ওষুধ সরবরাহকারী প্রফেসর পাড়া মোড় এলাকার আলামিন এক ভ্যান চালককেও আটক করে র্যাব। র্যাব সূত্র জানায়, নওয়াপাড়া বাজারে ভেজাল ও নকল ওষুধ সরবরাহ হচ্ছে গোপন সূত্রে এমন খবর পেয়ে র্যাব-৬ এর ডিআইডি কাউসার আজমের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের একটি টিম নওয়াপাড়ায় যশোর-খুলনা মহাসড়কের টিএ্যান্ডটি অফিসের সামনে অভিযান শুরু করে। এসময় দুইটি কার্টুন ভর্তি সন্দেহভাজন একটি ভ্যান তল্লাসী করে দুই কার্টুন সেকনো নামের নকল ওষুধ জব্দ করে ভ্যান চালককে আটক করে। ভ্যান চালক র্যাবকে জানায়, কার্টুন ভর্তি ওষুধগুলো কেশবপুরের পাজিয়ার নারায়নপুর গ্রামের হালিম সরদারের ছেলে প্রিন্স তাকে ওষুধগুলো কুরিয়ারে নেয়ার জন্য বলে। প্রিন্স কুরিয়ারে অপেক্ষা করবে। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর সে ভ্যান ভাড়া পরিশোধ করবে। পরে ভ্যান চালকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গুয়াখোলা গ্রামের আবাসিক এলাকায় একটি ভবনে অভিযান চালায় র্যাব সদস্যরা। এ সময় বিপুল পরিমান নকল ওষুধ (সেকনো ২০) জব্দ করা হয়। লাইফ কেয়ার নামের এই প্রতিষ্ঠানটি সেকনো ২০ গ্যাসট্রিক আলসার প্রতিরোধক ওষুধ তৈরি করে অনেক দিন যাবত বাজারজাত করে আসছে বলে জানায় স্থানীয়রা। তবে ভবনে অভিযান শুরুর আগেই ওষুধ তৈরির সাথে জড়িতরা সটকে পড়ে। এসময় কারখানার ভিতর থেকে নকল ওষুধ তৈরির দুইটি ম্যাশিন, সরঞ্জামাদী, ওষুধ তৈরির কাঁচামাল ও খালি প্যাকেট জব্দ করে। খালি প্যাকেটগুলোর গায়ে লেখা আছে লাইফকেয়ার সেকনো ২০। ওই বাসার একটি কক্ষে কয়েকটি পাত্রে পাতা শুকিয়ে গুড়া করা অবস্থায় পাওয়া যায়। মেইন গেটে একটি সাইন বোর্ড। তা খুব ছোট। লেখা আছে লাইফ কেয়ার (ফুড ও বিভ্যারেজ)। র্যাব সূত্র দাবি করেছে, এই চক্রটি বিভিন্ন গাছের শুকনা পাতা গুড়া করে তার সাথে ক্যামিকেল মিশিয়ে সেকনো নামের ওই ভয়াবহ ওষুধ তৈরি করে বাজারজাত করে আসছিলো। এদিকে সচেতন মহল দাবি করেছে, ওষুধ প্রশাসনের নির্লিপ্ততার কারনেই নওয়াপাড়াসহ সারাদেশে ভেজাল ও নকল ওষুধ সরবরাহকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের দাবি নওয়াপাড়া বাজার বা তার আশপাশের ফার্মেসি গুলোতে সাধারণত ওষুধ প্রশাসনের কোন অভিযান চলতে দেখা যায়না। নিয়মিত মনিটরিং ও অভিযানের নিয়ম থাকলেও অজ্ঞাত কারনে ওষুধ প্রশাসন নির্লিপ্ত থাকায় নকল ও ভেজাল ওষুধ আবিস্কার ও সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা ওষুধ প্রশাসনের নিয়মিত মনিটরিং ও অভিযান চালানোর দাবি করেছেন। শেষে রাতে ক্যাম্প কমান্ডার এডিশনাল এসপি সুরত আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রাত সাড়ে এগারটার দিকে তিনি সাংবাদিকদের জানান, রাতে ভেজাল ও নকল ওষুধ তৈরির কারখানাটি র্যাব সদস্যদের নজরদারিতে থাকবে। আজ শুক্রবার সকালে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।