নুসরাতের মামলায় গাফিলতি হলে ‘হস্তক্ষেপ করবে’ হাইকোর্ট

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

একাত্তর ডেস্ক : যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদের কারণে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আগুন দিয়ে হত্যার ঘটনায় তদন্তে গাফিলতি হলে হস্তক্ষেপ করবে হাই কোর্ট।

যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদের কারণে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আগুন দিয়ে হত্যার ঘটনায় তদন্তে গাফিলতি হলে হস্তক্ষেপ করবে হাই কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সাইয়্যেদুল হক সুমন বৃহস্পতিবার সকালে বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের সামনে উপস্থাপন করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের আরজি জানালে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চে এ কথা বলে।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, “আমরা যতটুকু জানি যে এ মামলা পিবিআইকে ট্রান্সফার করা হয়েছে তদন্তের জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে এটা তদারকি করছেন। তারপরও আমরা সমভাবে ব্যথিত। আমরা কোনোভাবেই চাই না সাগর-রুনির মত, মিতুর মত, তনুর মত এই মামলাটা যেন হারিয়ে না যায়।”

আইনজীবীকে সুমনকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, “আপনারা খেয়াল রাখেন। আমরাও খেয়াল রাখছি। তদন্তের কোনো জায়গায় কোনো কারণে যদি মনে হয় গাফিলতি আছে, আপনারা চলে আসবেন, আমরা ইন্টারফেয়ার (হস্তক্ষেপ) করব।”

ফেনীর সোনাগাজীর মেয়ে নুসরাত এ বছর আলিম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন। সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী ছিলেন তিনি।

ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ‘শ্লীলতাহানির’ অভিযোগ এনে গত মার্চে সোনাগাজী থানায় একটি মামলা করে নুসরাতের পরিবার।

সেই মামলা তুলে না নেওয়ায় অধ্যক্ষের অনুসারীরা গত শনিবার মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ।

শরীরের আশি শতাংশ পুড়ে যাওয়া নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার পরামর্শ দিলেও শারীরিক অবস্থার কারণে তা সম্ভব হচ্ছিল না।

শেষ পর্যন্ত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নুসরাতকে মৃত ঘোষণা করেন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সৈয়দ সাইয়্যেদুল হক সুমন বলেন, “আসলে এটাতো হৃদয় বিদারক ঘটনা। রাতে আমি এবং আমার পরিবারের লোকজন ঘুমাতে পারিনি। সকাল বেলা মাননীয় বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করি খবরের কাগজগুলো নিয়ে।

“আমি বলার চেষ্টা করেছি এই মেয়েটাই যে আগুনে পুড়েছে তা না, পুরো বাংলাদেশের মানুষ এই কয়দিন, যতদিন সে ঢাকা মেডিকেলে ছিল, মনে হয়েছে আমরা সবাই পোড়ার কষ্ট পাচ্ছি। এটা স্বাভাবিক না। সে যতদিন কষ্ট পেয়েছে, আমরাও সে কষ্টটা অনুভব করেছি। সে হয়ত মরে গিয়ে বেঁচে গেছে। কিন্তু আমাদেরকে তো রেখে গেছে।”

এ কারণে পুলিশের একজন উপপরিদর্শককে তদন্তের ভার না দিয়ে হাই কোর্টে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ চেয়েছিলেন বলে জানান এই আইনজীবী।
তিনি বলেন, “এ ঘটনায় বড় বড় দলের নেতারা থাকতে পারেন। ধর্মীয় অনুভূতির ব্যাপার থাকতে পারে। পুরো দেশের মানুষ বসে আছে এ ঘটনার একটা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দেখার জন্য।”

এ ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব বা ব্যক্তিরা থাকতে পারেন- এমন কথা কেন মনে হয়েছে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী বলেন, “খেয়াল করে দেখবেন যে, ঘটনার পরদিন অধ্যক্ষ গ্রেপ্তার হওয়ার পর মিছিল হল, মিছিলে বিভিন্ন দলের লোকজনের সমাগম হয়েছে। আমার মনে হয়েছে ব্যাপারটাতে অনেকের ইনভলভমেন্ট থাকতে পারে।

“কারণ এখানে একটা উসকানির ব্যাপার আছে। এটা একজন এসআইয়ের পক্ষে বোঝা সম্ভব নাও হতে পারে। বাংলাদেশ এটা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে আসা উচিৎ।”

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “এর চাইতে নির্মম ঘটনা হতে পারে না। তার গায়ে আগুন দেওয়া হয়েছে, সে কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। এই মামলা উচ্চ আদালতে এলে রাষ্ট্রপক্ষ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করবে।

Please follow and like us: