বঙ্গবন্ধুকে ফ্রেন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড বা ‘বিশ্ব বন্ধু’ হিসেবে আখ্যা

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

একাত্তর নিউজ ডেস্ক ঃ

জাতিসংঘ সদর দফতরে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে ফ্রেন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড বা ‘বিশ্ব বন্ধু’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বক্তারা।

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের আয়োজনে প্রথমবারের মতো যথাযোগ্য মর্যাদায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে।

স্থায়ী মিশনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার এ তথ্য জানানো হয়।

জাতিসংঘ কনফারেন্স রুম-৪-এ ১৫ আগস্ট স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর স্থায়ী প্রতিনিধি, কূটনীতিক, জাতিসংঘের কর্মকর্তা, মানবাধিকার কর্মী, লেখকসহ বিশিষ্টজনরা অংশ নেন।

এর আগে সকাল ৯টায় স্থায়ী মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার মাধ্যমে জাতির পিতার শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।

বিকালে সদর দফতরে আয়োজিত শোক দিবসের মূল অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

এ সময় দেশি-বিদেশি অতিথিরা জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। এরপর জাতির পিতার জীবন ও কর্ম এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা তুলে ধরে একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।

আলোচনা অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু ও বহুপাক্ষিকতাবাদ’ বিষয়ে কি-নোট পাঠ করেন জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে ভারত, সার্বিয়া ও কিউবার স্থায়ী প্রতিনিধি এবং প্যালেস্টাইনের স্থায়ী পর্যবেক্ষকরা বক্তব্য রাখেন। প্রবাসী বাঙালিদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান।

সবশেষে জাতির পিতা, বঙ্গমাতা, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই কালরাত্রিতে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির হাতে নৃশংসভাবে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য এবং জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, আমরা আগামী বছর বিশ্বব্যাপী জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছি। সে উপলক্ষে জাতিসংঘ সদর দফতরে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি ২০২১ সালে উদযাপন করা হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে ‘ফ্রেন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ বা ‘বিশ্ব বন্ধু’ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি জাতির পিতার সঙ্গে তার কর্মজীবনের নানা ব্যক্তিগত স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ আকবরউদ্দিন বলেন, ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন ভারতবাসী তাদের অকৃত্রিম বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা জানতে পারে তখন ভারতের স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ মুহূর্তেই বিষাদে রূপ নেয়।

ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি বাংলাদেশকে উন্নয়নের বিস্ময় হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এটি সম্ভব হয়েছে- কারণ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সার্বিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি মিলান মিলানোভিচ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভিকা দাচিচের বাণী পড়ে শোনান। বাণীতে সার্বিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর বিখ্যাত উক্তি ‘বাংলার মানুষের প্রতি ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি, আর আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতাও এটা যে, আমি তাদের অনেক বেশি ভালোবাসি’ উল্লেখ করেন।

কিউবার রাষ্ট্রদূত আনা সিলভিয়া রদ্রিগেজ বঙ্গবন্ধুর অনন্য সাধারণ নেতৃত্ব, প্রচেষ্টা ও সাহসের কথা বলতে গিয়ে ১৯৭৩ সালে কিউবার মহান নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সেই বিখ্যাত উদ্ধৃতি ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি, তাই হিমালয় দেখার সাধ আর আমার নেই’ উল্লেখ করেন।

প্যালেস্টাইনের স্থায়ী প্রতিনিধি রিয়াদ এইচ মনসুর বলেন, আজ ৪৪ বছর পর জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে; যা এই বিশ্বনেতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি অনন্য উদ্যোগ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেছা, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মুকিত চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বাংলাদেশি।

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় শোক দিবস পালিত : ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে।

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মাধ্যমে শোক দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। এরপর রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন দূতাবাস প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষমূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামে শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।

পরে বঙ্গবন্ধু, তার পরিবার এবং ১৫ আগস্টে অন্য শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর কর্মজীবনের ওপর আলোচনা ও একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

রাষ্ট্রদূতের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন- ড. ডেভিড নালিন, রাষ্ট্রদূত হোসাইন হাক্কানী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ ওয়াশিংটন শাখার সভাপতি মিজানুর রহমান মজুমদার।

Please follow and like us: