বেনাপোল কাস্টমসে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি ১ হাজার ৪’শ ৪৩ কোটি

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

সাহাবুদ্দিন আহমেদ, বেনাপোল : দেশের সর্ববৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে (২০১৮-১৯) অর্থবছরে ভারতের সঙ্গে আমদানি বাণিজ্যে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৪’শ ৩ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৪’শ ৪৩ কোটি টাকা কিন্তু আদায় হয়েছে ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা। তবে কাস্টমসের পরবর্তী সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ১’শ ৮৫ কোটি টাকার হিসাবে ঘাটতি হয়েছে ১ হাজার ১’শ ৪৫ কোটি।

বেনাপোল বন্দরে বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বন্দর ও কাস্টমসের বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, শুল্কফাঁকি ও পণ্য খালাসে হয়রানির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে। এছাড়া বাণিজ্য তদারকিতে নিয়োজিত সংস্থ্যাগুলোর মধ্যে পরস্পরের সমন্বয়ের অভাব। এতে ব্যবসায়ীরা হতাশাগ্রস্থ্য হয়ে অনেকে বাণিজ্য ছেড়ে দিচ্ছে, আবার কেউ এপথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্য বন্দর দিয়ে বাণিজ্য করছে। ফলে এখান থেকে সরকার যেমন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে, তেমনি লোকশান গুনছেন ব্যবসায়ীরাও। তবে, বৈধ সুবিধা নিশ্চিত হলে আবারও এ বন্দরের ব্যবসায়ীক গতি ফিরে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যাক্ত করেন ব্যবসায়ীরা।

অপরদিকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলেছেন, শুল্কফাঁকি রোধে কড়াকড়ি আরোপ করায় আমদানি কমে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধাগুলো বাড়াতে কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

জানাযায়, দেশে ২৩টি স্থলবন্দরের মধ্যে চলমান ১৩টি বন্দরের সবচেয়ে বৃহৎ আর বেশি রাজস্ব দাতা বেনাপোল বন্দরের কাস্টমস হাউস। এ বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। দেশে স্থলপথে যেসকল পণ্যসামগ্রী আমদানি হয় তার ৫ শতাংশ হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে।

১৯৭২ সাল থেকে এ পথে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয়। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। যা থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। বন্দরে আমদানি পণ্যের ধারণ ক্ষমতা ৪২ হাজার মে.টন কিন্তু এখানে সার্বক্ষণিক পণ্য থাকে প্রায় দেড় লাখ মে.টন। বর্তমানে বন্দরে ২৮টি পণ্যগার, ৮টি ওপেন ইয়ার্ড, একটি ভারতীয় ট্রাক টার্মিনাল, একটি রফতানি ট্রাক টার্মিনাল ও ১টি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ডের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ১’শ ৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এতে ঘাটতি ছিল ১’শ ৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ হাজার ৪’শ ৮৩ কোটি টাকা । এখানে ঘাটিত রয়েছে ১ হাজার ৪’শ ৩ কোটি টাকা।

বেনাপোল বন্দরের ব্যবসায়ী আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, কাস্টমসে আমদানি পণ্য পরীক্ষণের নামে হয়রানি বেড়েছে। টাকা না দিলে পণ্যের নমুনা ঢাকায় ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে চায়। এছাড়া পণ্য পরীক্ষণের ভাল ব্যবস্থা আর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর থাকলে হয়রানি পোহাতে হতোনা। তাই, ঝামেলা এড়াতে এপথে আমদানি কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকে আবার ব্যবসা বন্ধ রেখেছেন।

বেনাপোল বন্দরের আরেক ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে কাস্টমস কর্তৃক আমদানি পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও সুনিদিষ্ট কোন অভিযোগ ছাড়া বিজিবি সদস্যরা তা আটক করেছে। সেখানে ২/৩ দিন পণ্য চালান আটকে থাকছে। আমদানি, রফতানি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিজিবি আর কাস্টমসের মধ্যে পরস্পরের সমন্বয় দরকার। এতেও লোকশানের কারণে বাণিজ্যে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এ বন্দর দিয়ে সকল আমদানিকারকরা ব্যবসা করতে চায়। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যায় সুষ্ঠ বাণিজ্য বাধাগ্রস্থ্য হওয়ায় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সফল হচ্ছে না। এছাড়া সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘন্টা বাণিজ্য সেবা চালু থাকলেও ব্যবসায়ীরা তার সুফল পাচ্ছে না। তাই, বাণিজ্য প্রসার করতে হলে বৈধ সুবিধা প্রদান ও অবকাঠামগত উন্নয়নের বিকল্প নেই।

আমদানি রফতানি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, বন্দরের অবকাঠামগত উন্নয়ন সমস্যা আর অনিয়মের ফলে বারংবার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘঠে অনেকে দেউলিয়া হয়েছে। পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে অনেক ব্যবসায়ী। এখানে এখনও সাধারণ পণ্যগারে কেমিকেল পণ্য খালাস করা হয়। বহিরাগতরা অবাধে প্রবেশ করছে বন্দরের ভিতরে। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবী ছিল বন্দরের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন এ বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে ভয় পায়।

এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার জাকির হোসেন বলেন, পণ্য চালান খালাসে পূর্বের চেয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বেড়েছে কাস্টমসের। শুল্কফাঁকি বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করায় এবং শুল্কফাঁকির সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ায় কিছু ব্যবসায়ী এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়েছে। এছাড়া বেশি রাজস্ব আসে এমন পণ্য আমদানি কম হচ্ছে। যেকারণে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তবে, ব্যবসায়ীদের বৈধ সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে কাস্টমস আন্তরিক হয়ে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

Please follow and like us: