যশোরের চৌগাছায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে অপহরণের পর বিয়ে অতঃপর উদ্ধার

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

যশোর প্রতিনিধি : যশোরের চৌগাছা উপজেলার ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে অপহরণের পর বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তের নাম মোহন (৩৫)। তিনি ওই উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের কিসমতখানপুর গ্রামের মৃত ইন্তাজ আলীর ছেলে। এটা মোহনের তৃতীয় বিয়ে। এ ঘটনায় মেয়ের পরিবারের সদস্যরা চৌগাছা থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ শনিবার রাতে মেয়েটিকে মোহনের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। মেয়েটি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় শনিবার রাতেই তাকে চৌগাছা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মেয়েটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছা ছারা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির এই ছাত্রীকে অপহরণ করে পাশের জেলা শহর ঝিনাইদহে নিয়ে জোরপূর্বক মোহনের সাথে বিয়ে দেন ঘটক তিব্বত হোসেন। এ বিষয়ে রাতেই মামলা করতে চাইলে পুলিশ না নিয়ে পারিবারিকভাবে মিটিয়ে ফেলতে পরামর্শ দেয় বলে অভিযোগ করেছেন মেয়ের বাবা। তবে রোববার দুপুরে চৌগাছা থানার এএসআই নজরুল ইসলাম জানান, ওই ভিকটিমের পরিবারকে থানায় মামলা করার জন্য আসতে বলা হয়েছে। পরে এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন মেয়েটির পিতা।
মেয়ের বাবা বলেন, আমি দিনমজুর। চৌগাছা বাজারের একটি পাড়ায় বসবাস করি। গত ২৮ আগস্ট আমরা বাড়িতে কেউ ছিলাম না। এসময় আমার মেয়ে বাড়ির বাইরে বের হলে তাকে অপহরণ করে ঘটক তিব্বত ও তার এক আত্মীয়। এর আগের দিন ওই ঘটক আমাকে মোহন নামে এক ব্যক্তির সাথে মেয়ে বিয়ে দেয়ার জন্য চাপাচাপি করে। আমি তাকে বলি, আমার মেয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ে, এখনো ছোট। তাকে আমি বিয়ে দেব না। এ নিয়ে ঘটকের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়। ঘটক তিব্বত আমাকে হুমকি দেয় ‘তোমার মেয়েকে নিয়ে যেতে আমার পাঁচ টাকার ভাজা খরচ হবে।’
মেয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরো বলেন, মেয়েকে অজ্ঞান অবস্থায় একটি গাড়িতে করে ঝিনাইদহ নিয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। গাড়ির মধ্যে জ্ঞান ফিরলে তার হাত-মুখ চেপে ধরে দুজন। মেয়েটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় হাসপাতালের ডাক্তার তাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই ঘটক ও তার ভায়রা মেয়েটিকে হাসপাতাল থেকে অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে এসে কোনো একটি কাজী অফিসে মোহনের (৩৫) সাথে বিয়ে দেয়। মোহনের আগের দুই স্ত্রীর একজন অসুস্থ, অন্যজন আত্মহত্যা করে মারা যায়। বিয়ের পর মোহন মেয়েটিকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী মহেশপুর উপজেলার আদমপুর গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে ওঠে।
তিনি বলেন, আমরা থানায় অভিযোগ দেয়ার পরও পুলিশ আসামিদের আটক করেনি। পরে শনিবার রাতে উপজেলার কিসমতখানপুর থেকে আমার মেয়েকে উদ্ধার করে রাতে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে চৌগাছা থানার পুলিশ। আমরা রাতেই মামলা করতে চাইলে পুলিশ বলে এক হাতে তালি বাজে না। তোমাদের মেয়েরও সায় আছে। মামলা করে কি লাভ হবে। বাড়ি নিয়ে গিয়ে পারিবারিকভাবে মীমাংসা করে নাও।
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুরাইয়া পারভীন জানান, মানসিক ডিপ্রেশনের (এইচসিআর) রোগী হিসেবে তাকে ভর্তি রাখা হয়েছে।
এএসআই নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। আমরা আসামিদের আটক করতে অভিযান চালাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে রোববার বিকেলে চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজীব বলেন, প্রাথমিকভাবে জেনেছি ওই ছেলের সঙ্গে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটি ওই ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল। মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

Please follow and like us: