১৪ই এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন, জরুরি সেবা ছাড়া সব বন্ধ থাকবে-71news24

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

 

শেখ গফ্ফার রহমান, একাত্তর নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম ডেক্সঃ

এর আগে লকডাউন ঘোষণার দুদিন পরই যানবাহন, দোকানপাট আবার খুলে দেওয়া শুরু হয়।

বাংলাদেশের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন যে আগামী ১৪ই এপ্রিল থেকে পুরোদেশে সাত দিনের ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হবে।

 

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, এই সময়ে জরুরী সেবা ছাড়া সরকারি, বেসরকারী ও স্বায়ত্তসাশিতসহ সব ধরণের অফিস এবং একই সাথে কল কারখানাও বন্ধ থাকবে। কঠোর লকডাউনের সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

 

‘কঠোর লকডাউন’-এর সময় আরও বাড়ানো হবে কি-না তা পরে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান মন্ত্রী।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী এই কঠোর লকডাউন দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

 

“যদিও এ লকডাউনকে কার্যকর করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের চিন্তা আপাতত সরকারের নেই, তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে,” তিনি আরও বলেন।

 

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী জানান, লকডাউন যাতে কার্যকর করা যায়, সেজন্য হতদরিদ্র মানুষদের খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে দেশের সব ইউনিয়ন ও উপজেলায় সাড়ে পাঁচশো’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

 

এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, জনস্বার্থে আগামী ১৪ই এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ দেয়ার বিষয়ে সরকার সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে।

 

সরকারের প্রভাবশালী এই মন্ত্রী এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান, যা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

 

জনাব ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, এবং লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার, সঙ্গে বাড়ছে অবহেলা ও উদাসীনতা।

 

“চলমান এক সপ্তাহের লকডাউনে জনগণের উদাসীন মানসিকতার কোন পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। তাই সরকার জনস্বার্থে আগামী ১৪ই এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়ে সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছে,” তিনি বলেন।

 

তবে সর্বাত্মক লকডাউন বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে বা সেটির পরিধি কেমন হবে, তা নিয়ে মন্ত্রী কোন মন্তব্য করেননি।

 

দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক ভাবে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এর আগে গত ৫ই এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আরোপ করেছিলো সরকার, যা লকডাউন হিসেবেই পরিচিতি পায়।

 

এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সব ধরণের গণপরিবহন ছাড়াও দোকানপাট, শপিং মল বন্ধ থাকার কথা। একই সাথে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হতে বলা হয়েছিল। তবে কলকারখানা, কাঁচাবাজারসহ কিছু প্রয়োজনীয় দোকানপাট খোলা থাকারও সুযোগ রাখা হয়।

এসব বিধিনিষেধ কার্যকরের আগেই ঢাকা ছাড়ে লাখ লাখ মানুষ। আবার বিভিন্ন জায়গায় বিধিনিষেধ কার্যকর করা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

 

অন্যদিকে, শুধু গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়ে অফিসগামী মানুষ।

এমন প্রেক্ষাপটে সরকার বিধিনিষেধ শিথিল করে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় এবং আজ শুক্রবার থেকে শপিংমল ও দোকানপাট স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলার অনুমতিও দেয়া হয়েছে।

এভাবে কার্যত অচল হয়ে পড়ে সব বিধিনিষেধ, আর এরই মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও এতে মৃত্যুর সংখ্যাও।

 

গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যবিভাগ জানিয়েছে যে তার আগের চব্বিশ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা ছিলো এক দিনে এ যাবত কালের সর্বোচ্চ – ৭৪ জন, আজ শুক্রবার ৬৩ জন।

এছাড়া, প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে নতুন করে ৬/৭ হাজার মানুষ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই এ অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন সবাই সচেতন না হলে পুরো শহরকে হাসপাতাল বানালেও রোগীর জায়গা দেয়া সম্ভব হবে না।

 

পরিস্থিতি মোকাবেলায় চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা সর্বাত্মক লকডাউন আরোপ এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়া বা রাত্রিকালীন কারফিউ দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেয়ারও পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

 

ওদিকে সরকারের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যে জাতীয় কমিটি রয়েছে, তারাও পরিস্থিতিকে স্বাস্থ্য জরুরী অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে।

 

এর মধ্যেই আজ মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৪ই এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউন আরোপের ইঙ্গিত দিলেন।

Please follow and like us: