ফেসবুকে পরিচয় ২ তরুণীর, আজীবন একসঙ্গে থাকতে চান

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

শেখ গফ্ফার রহমান, স্টাফ রিপোর্টারঃ

নোয়াখালীর এক তরুণী ভালোবাসার টানে টাঙ্গাইলের বাসাইলের স্কুলছাত্রীর কাছে ছুটে এসেছেন। রোববার বিকেলে উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের ময়থা গাছপাড়া গ্রামে ওই ছাত্রীর বাসায় এসে উঠেছেন তরুণী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও টিকটকের মাধ্যমে পরিচয় হয় তাদের। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলে জানান দু’জনেই।

 

এদিকে গ্রামবাসী বিষয়টি ভিন্ন চোখে দেখলেও চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, এটা তেমন কোনো সমস্যা না। সব সময় যে বিপরীত লিঙ্গের দিকেই আকর্ষণ থাকবে, তাও না। এটা একটি সাময়িক আকর্ষণ। যা পরবর্তীতে কেটে যাবে। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের উৎসুক মানুষজন তাদের একনজর দেখতে ওই বাড়িতে ভিড় করছেন।

নোয়াখালীর তরুণী জানান, ফেসবুকে তাদের পরিচয় হয়। এরপর দুই বছর হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেন। জড়িয়ে পড়েন প্রেমে। তবে তাদের এই সম্পর্ক মানতে পারছে না পরিবার। আমি তাকে (স্কুলছাত্রী) ভালোবাসী, তাই ওর কাছে চলে এসেছি। আমি আমার ফ্যামিলিকে বলেছিলাম, ওর কাছে যাবো। কিন্তু তারা রাজি হয়নি। তারা আমাদের সম্পর্ক মানবে না। তাই বাড়ি থেকে নিরুপায় হয়ে পালিয়ে এসেছি। এখন ওর পরিবার না মানলে আমরা দু’জনে অন্য কোথাও গিয়ে বসবাস করবো।

 

টাঙ্গাইলের স্কুলছাত্রী জানায়, ‘তাকে (তরুণী) নিয়ে আমি এর আগে ঢাকায় গিয়েছিলাম। আমরা ঢাকায় দেখা করেছি। ঢাকায় আমাদের ফ্যামিলি গিয়ে আমাদের আলাদা করে নিয়ে এসেছে। পরিবারের লোকজন আমার ফোন কেড়ে নিয়ে নিয়েছিলো। কয়েক দিন পর ফোন ফেরত দেয়। তখন আবার আমরা যোগাযোগ করে তাকে আমার বাসায় নিয়ে এসেছি। সামাজিকভাবে আমাদের কেউ মানবে না। কিন্তু আমি ওর সঙ্গেই সারাজীবন থাকতে চাই। বাঁচলেও ওর সঙ্গে, মরলেও ওর সঙ্গে। পুলিশ বা তারা যদি আমাদের মেরে ফেলতে চায়, তাহলে দু’জনকে একসঙ্গেই মারবে। আর যদি বাঁচিয়ে রাখতে চায়, তাহলে দু’জনকেই রাখতে হবে।’

 

স্কুলছাত্রীর মা বলেন, ‘অনেক আগে থেকে না করছিলাম। এর আগে ওরা ঢাকায় চলে গিয়েছিল। তারপর দু’জনকে আলাদা করে রেখেছিলাম। পরে এখন আবার চইলা আসছে। তাদের এই সম্পর্কের কারণে মানুষ বাড়িতে ভিড় জমাইতেছে। আমরা ওই মেয়ের পরিবারকে খবর দিছি। তারা আসার পর তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

 

রহিজ উদ্দিন নামে স্থানীয় একজন বলেন, ‘আমার জীবনে প্রথম এই রকম ঘটনা দেখলাম। বিষয়টি দেখে খুব অবাক লাগছে।’ ওই গ্রামের ছানা মিয়া বলেন, ‘মেয়ে-মেয়ে সম্পর্ক কোনো দিন দেখি নাই। একজন আরেকজনকে ছাড়া বাঁচবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।’

 

টাঙ্গাইল মাহমুদুল হাসান কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক বিএম দীপক পাল বলেন, ‘সব সময় যে মেয়েদের এই আকর্ষণ থাকবে, তা নয়। যেকোনো সময় তাদের মানসিকতার পরিবর্তন হতে পারে। তাদের দু’জনের মাঝে সাময়িক একটা বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে।’

 

বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. সুজাউদ্দিন তালুকদার বলেন, এটা মেডিকেলের ভাষায় সম্ভব হতে পারে। এটা একটা মানসিক রোগ। এ রোগের কারণেই সে সম লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয়।’

 

বাসাইল থানার ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এটি অসম প্রেম। দুই মেয়েকে পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হবে। তাদের কাউন্সিলিং প্রয়োজন। পরিবারের লোকজনকে তাদের কাউন্সিলিং করতে পরামর্শ দেওয়া হবে।’

 

বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন জানান, ‘নোয়াখালী স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ওই মেয়ের অভিভাবকদের খবর দিয়ে বাসাইলে আনা হয়েছে। নোয়খালীর স্থানীয় প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বিষয়টি এখন সমাধানের পথে।

Please follow and like us: