বাগআঁচড়ার জোহরা ক্লিনিকে…ডাক্তারের ব্যস্ততায় আলোর মুখ দেখা হলোনা নবজাতকের

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বেনাপোল : যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়ায় “জোহরা মেডিকেল সেন্টার” নামে একটি বে-সরকারী ক্লিনিকে এক প্রসৃতি মা’য়ের সন্তান প্রসবকালে ডাক্তারের ব্যস্ততায় আলোর মুখ দেখা হলোনা নবজাতকের। গত রবিবার সকালে শার্শা উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের হাসানের স্ত্রী সন্তান প্রসবের জন্য জোহরা ক্লিনিকে ভর্তি হলে সিজারের সময় ডাক্তারের ব্যস্ততায় প্রসৃতির গর্ভের সন্তানের কপাল কেটে গেলে মঙ্গলবার সকালে নবজাতকটি মারাগেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, জোহরা ক্লিনিকের মালিক হাবিবুর রহমান এবং তার স্ত্রী নাজমুন নাহার রানী দু’জনেই সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার। হাবিবুর রহমান সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আর স্ত্রী নাজমুন নাহার রানী বাগআঁচড়া সরকারী হাসপাতালের চাকরি করেন আর পাশাপাশি নিজেদের ব্যক্তিমালিকানাধীন জোহরা মেডিকেল সেন্টার নামক ক্লিনিকের ব্যবসা করেন। দু’জনেই সরকারি ডাক্তার হওয়ার সুবাদে প্রতিদিন তাদের জোহরা ক্লিনিকে ১০ থেকে ১৫টি সিজারিয়ান প্রসৃতির ডেলিভারী হয়। সাথে আছে অন্যান্য অগনিত রোগী। এদিন হাসপাতালের তাড়া থাকায় ব্যস্ততার মাঝে এই প্রসৃতি মায়ের সিজার কার্য পরিচালনা করতে গিয়ে নবজাতকটির কপাল কেটে ফেলেন তিনি। অবশেষে মা রক্ষা পেলেও আলোর মুখ দেখা হলোনা নবজাতকটির। স্থানীয়রা আরো বলেন, জোহরা ক্লিনিকে ২০টি সিটের অনুমোদন থাকলেও এখানে প্রায় ৪০ টির মত সীট ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় ডাক্তার মাত্র স্বামী আর স্ত্রী। তাও আবার সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার হওয়ার সুবাদে হাসপাতালের মন রক্ষা করে সময় দিতে হয়। যেকারণে প্রায়ই এখানে এধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে থাকে। কখনো সন্তান হারান আবার কখনো প্রসৃতি মায়ের পেটের ভিতরেই থেকে যায় গজ কিংবা ধারালো অস্ত্রের অংশবিশেষ। ঘটনাগুলি নিয়ে তাৎক্ষণিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলেও ঝড় ওঠার আগেই লাগাম টেনে ধরার সংশ্লিষ্ঠ বিভিন্ন মহল ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় বিক্রি হয়ে যাওয়ায় ঢামাচাপা পড়ে যায় কতোনা মা’য়ের করুণ আর্তনাদ। চিৎকার করে কাঁদতে পারেনা বুকফেটে যাওয়া অসহায় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় হাসানের বড় ভাই মাসুদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, রবিবার সকালে আমার ছোট ভাই হাসানের স্ত্রীকে জোহরা ক্লিনিকে ভর্তি করি সন্তান প্রসবের জন্য। দুপুর ১টার সময় সিজার করেন ডাক্তার হাবিবুর রহমান হাবিব। সন্ধ্যার সময় দেখতে পায় শিশুটির কপালে ৩টি সেলায় দেওয়া। জিজ্ঞাসা করলে বলে ফুসকুড়ি হইল তাই কেটে সেলায় করে দিয়েছি। পরের দিন খারাপ অবস্থা হলে যশোরে নেওয়ার কথা বলে। আদ-দ্বীন শিশু হাসপাতালে নিলে বলে এখানে সম্ভব না। খুলনায় কোন বড় হাসপাতালে নিতে। আকিজ হাসপাতালে নিলে বলে এ শিশু বাঁচানো সম্ভব নয়। আড়াই’শ বেডে নিতে পারেন। সেখানে নিলে বলে শিশুটি বাঁচানো সম্ভব নয়। তারপরেও কাকুতি-মিনতি করলে আড়াই’শ বেডে চিকিৎসা দেয় কিন্তু তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। সেখান থেকে লাশটি নিয়ে আবারো বাগআঁচড়ার সাতমাইলে জোহরা ক্লিনিকে যায় এবং প্রতিবাদ করি। ডাক্তার হাবিব না থাকায় লাশটি নিয়ে আমরা সেখানে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। কিন্তু ডাক্তার হাবিব আর ফেরেনি। পরে ক্লিনিকের কর্মচারিরা বলেন শিশু বাচ্চাতো কোন অপরাধ করেনি, তাহলে তাকে কেন কস্ট দিবেন, লাশটি মাটি দিয়ে তারপরে আসেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জোহরা ক্লিনিকের এক কর্মচারি জানায়, ওইদিন ডাক্তার হাবিবুর রহমান একাই ১১ টি সিজার করেন। যেকারণে এদূর্ঘটনা বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে ডাক্তার হাবিবুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শার্শার সকল সাংবাদিকরা আমার ভাই। এতগুলো ভাই থাকতে সামান্য একটু ভুলের জন্য আমার ক্ষতি হবে এটা আমি বিশ্বাষ করিনা। এ বিষয়ে শার্শা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আতাউর রহমান বলেন এরকম কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please follow and like us: