মেয়াদ শেষেই চেয়ার (পদ) ছাড়তে হবে জনপ্রতিনিধিদের-71news24

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

 

শেখ গফ্ফার রহমান, স্টাফ রিপোর্টার।

আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায়। সিটি করপোরেশনের মতো এবার পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইনের সংশোধন করেছে সরকার। স্থানীয় সরকারের এই দুই প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হলেই তাদের চেয়ার (পদ) ছাড়তে হবে। মামলা করে বা কৃত্রিম ইস্যু তৈরি করে আর চেয়ারে থাকতে পারবেন না মেয়াদোত্তীর্ণ জনপ্রতিনিধিরা।

 

সেখানে অন্তর্বর্তীকালীন ‘প্রশাসক’ নিয়োগ করবে সরকার। যারা পরবর্তীতে নতুন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে। স্থানীয় সরকারের বাকি স্তরেও (জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ) একই সুযোগ সৃষ্টি করতে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করা হবে বলে আভাস দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে বিদ্যমান জেলা পরিষদ আইন, উপজেলা পরিষদ আইন এবং স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় সংশোধন করা হবে।

 

গতকাল সোমবার ৪ অক্টোবর ২০২১ ইং, মন্ত্রী সভার বৈঠকের সংবাদ সম্মেলনে উল্লিখিত আভাস দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ পাঁচ বছর। কিন্তু পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আগের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই পৌরসভা চালান। এতে বিভিন্ন ইস্যুতে মামলা করে কেউ কেউ ৮ থেকে ১০ বছর, এমনকি ১৬ বছর পর্যন্ত থেকে যাচ্ছেন।

 

এ জন্য আইনটি সংশোধন করে ছয় মাসের জন্য প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগের ব্যবস্থা আছে। সংশোধিত আইন পাস হলে স্থানীয় সরকার বিভাগ পদক্ষেপ নিয়ে যেখানে জটিলতা রয়েছে সেখানে প্রশাসক বসাবে। ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ আইনও সংশোধন করা হবে। ’ ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ প্রসঙ্গে বিদ্যমান আইনের ২৯(৩) ধারায় বলা হয়েছে- পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পর ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

 

উপধারা (৫)-এ বলা হয়েছে- কোনো কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সরকারের লিখিত আদেশ দ্বারা নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বা ৯০ দিন পর্যন্ত, যা আগে ঘটবে, সংশ্লিষ্ট পরিষদকে কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান করা যাবে। অর্থাৎ আগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই নতুন নির্বাচিতদের হাতে দায়ীত্ব হস্তান্তর করবেন। একইভাবে উপজেলা পরিষদ আইনের ৭(৫৩) ধারায় বলা আছে-পরিষদের প্রথম সভা হতে মেয়াদ পাঁচ বছর।

 

কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করা না গেলে মেয়াদোত্তীর্ণ জনপ্রতিনিধরাই নতুন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রথম সভা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। প্রায় অভিন্নভাবে জেলা পরিষদ আইনের ৫(৬১) ধারায় একই কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ বিদ্যমান জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের আইন অনুযায়ী এসব স্তরের জনপ্রতিনিধিরা তাদের দায়ীত্বের মেয়াদ শেষ হলেও তারা পরবর্তী নতুন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রথম সভা পর্যন্ত দায়ীত্ব পালন করতে পারেন।

 

এসব আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে কোনো কোনো জনপ্রতিনিধি নানা ইস্যুতে আদালতে মামলা ঠুকে বছরের পর বছর দায়িত্ব পালন করছেন। বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে এ ধরনের নজির অহরহ। এসব জটিলতা দূর করতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মেয়াদ পাঁচ বছর নির্দিষ্ট করতেই সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হলে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারি। পৌরসভায়ও একই ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদেও এই সমস্যা রয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে বাকি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইনও সংশোধন করা হবে। ’ বর্তমানে স্থানীয় সরকারের পাঁচ ধরনের আইন আছে। আইনগুলো বেশ আগে করা।

 

এগুলো ১৯৯৮ থেকে শুরু করে ২০০৯ সালে করা হয়েছিল। এরমধ্যে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯’ অনুযায়ী সিটি করপোরেশন, ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯’ অনুযায়ী পৌরসভা, ‘জেলা পরিষদ আইন, ২০০০’ অনুযায়ী জেলা পরিষদ, ‘উপজেলা পরিষদ (রহিত আইন পুনঃপ্রচলন ও সংশোধন) আইন, ২০০৯’ অনুযায়ী উপজেলা পরিষদ এবং ‘স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯’ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালিত হয়।

Please follow and like us: