আবু তাহের,যশোর অফিস :
যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া জঙ্গলবাঁধাল উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্বাস্থ্য সেবা দিতে চরম ভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। জঙ্গলবাঁধাল উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, লেবুতলা ও নরেন্দ্রপুরের শাঁখারিগাতী মোট যশোর জেলার তিনটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এর মধ্যে জঙ্গলবাঁধাল উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র চলছে সবচেয়ে দায়িত্বহীনতায়। সরেজমিনে দেখাযায় মাত্র একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সকল দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছেন। ফার্মাসিস্ট গোলাম রহমান ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগদান করেন। তিনি বলেন ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাস থেকে বাকি ৩টি পদের চেয়ার অদ্যবদি শূণ্য হয়ে আছে। শুণ্য পদের মধ্যে রয়েছে, মেডিকেল অফিসার, স্যাকমো, এমএলএসএস। একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন মেডিকেল অফিসার। যার অবর্তমানে গুরুতর ও বিভিন্ন অসুস্থ্য রোগীর জন্য যথাযথ চিকিৎসা প্রদান সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব। যে কারণে অসংখ্য মানুষ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
![](http://www.71news24.com/wp-content/uploads/2019/08/একাত্তর-নিউজ-২৪-300x48.jpg)
একজন ফার্মাসিস্ট এর পক্ষে সম্ভব নয় মেডিকেল অফিসার বা বাকিদের কাজ করা। ভৌগলিক দিক দিয়ে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি জনবহুলতায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাত্র একশ গজের মধ্যেই রয়েছে জঙ্গলবাঁধাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছাত্র-ছাত্রী সাড়ে তিন শতাধিক, একই প্রাচীরের মধ্যে রয়েছে জঙ্গলবাঁধাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ও জঙ্গলবাঁধাল মডেল স্কুল, ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা সাড়ে তিন শতাধিক। সর্বমোট এখানকার ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা প্রাই ২ হাজার। কাছেই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী জঙ্গলবাঁধাল ভৈরব যুবসংঘ, বসুন্দিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস, জঙ্গলবাঁধাল ডাকঘর, সিঙ্গিয়া রেলওয়ে স্টেশন, জামে মসজিদ, মন্দির এবং বড় একটি বাজার। জঙ্গলবাধাল মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত জেএসসি ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা, বসুন্দিয়া টিচার্স এসোসিয়েশন বৃত্তি পরীক্ষা, কয়েকটি বিদ্যালয়ের মডেল টেস্ট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
অনুষ্ঠিত হয় ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে শিক্ষণীয়, বিনোদনমূলক, নির্ধারিত পূজা-পার্বন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠিত হয় আন্তঃ ইউনিয়ন বার্ষিক ক্রীড়া, প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টূর্ণামেন্ট, স্কুল ও মাদ্রাসা সমন্বয়ে আন্তঃ মাধ্যমিক ফুটবল টূর্ণামেন্ট। যার কারণে এসব সময় ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা, হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী, শত শত অভিভাবক দীর্ঘ সময় এখানে অবস্থান করেন। বছরের প্রায় সব সময়ই এখানে জনবহুল ও উৎসব মূখর থাকে। খেলাধুলা ও বিভিন্ন কারণে প্রায়ই ছাত্র-ছাত্রীরা অসুস্থ্য হয়ে পড়ে, অসুস্থ্য ও আহত হয় এলাকার মানুষ। জঙ্গলবাধালের স্কুল সংলগ্ন চৌরাস্তার উত্তর-পশ্চিম কোণাভ্যান্তরে ৫০ গজের মধ্যে দীর্ঘ ঐতিহ্য বহনকারী সনামধন্য এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র। যার সেবা ও পরিচর্যার সরণাপন্ন হলে দ্রুত চিকিৎসা পেত সকলে। গত ৮ মাসেরও অধিক সময় ধরে এখানে যথাযথ সেবা পাচ্ছেনা এলাকাবাসী। বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিদিন অসংখ্য অসুস্থ্য মানুষ তাদের প্রাপ্য সেবা থেকে।
একমাত্র দায়িত্বরত ফার্মাসিস্ট গোলাম রহমান বলেন, সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে হতাশা সৃষ্টি হওয়ায় বিগত ৮ মাস থেকে চিকিৎসা নিতে আসা অসুস্থ্য মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমেই চলেছে। খাতার রেকর্ড থেকে তিনি জানান, মাসে প্রাই ১ হাজার রোগী এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের শরণাপন্ন হয়। তিনি বলেন, আমি একটি পদের মাত্র একজন ব্যাক্তি এত বড় প্রতিষ্ঠান সকাল ৮টা থেকে ২টা ৩০মিনিট পর্যন্ত চালাতে হিমসিম খাচ্ছি। ঝাড়– দেওয়া থেকে শুরু করে বাকী সব কাজ করতে গিয়ে আমি মাঝে মাঝে আমার ভারসম্যতা হারিয়ে ফেলছি। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবা নিশ্চিত করতে যেয়ে আমি অসুস্থ্য হয়ে পড়লেও বিশ্রাম পাচ্ছিনা। আমি দিন দিন পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ছি, পারছিনা সকল রুগীর ঔষধ দিতে এজন্য মানষিক ভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে ফার্মসিস্ট গোলাম রহমান জানান, আমি কয়েকবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ইমদাদুল হককে এখানকার অবস্থা সম্পর্কে অবগত করেছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন কিন্তু নতুন কাউকে এসব শুণ্যপদে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি এখন পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়নি। আমাদের প্রতিবেদক যখন জঙ্গলবাধাল উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট গোলাম রহমানের সাথে কথা বলেন তখন ঐ ফার্মাসিস্ট জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আমি চাই এখানকার কোন মানুষ যেন স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। এ বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও জঙ্গলবাধাল মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মরহুম ডাঃ খলিলুর রহমানের জৈষ্ঠ পূত্র মাস্টার মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি আমার বাড়ির পাশেই। এতবড় প্রতিষ্ঠান যদি দিন দিন দায়িত্বহীন হয়ে পড়ে তাহলে আমাদের জবাবদিহিতা বেড়ে যাবে। অতি সত্বর এই সংকট দুর করার জন্য উর্ধতন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। মডেল স্কুলের সভাপতি মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার গ্রামের স্বাস্থ্য কেন্দ্র আমাদের শিক্ষার্থী ও জনগণের সেবায় যেন এভাবে নাজ্যুক হয়ে না পড়ে সেই প্রত্যাশা করি। এঅবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। সম্মৃদ্ধ ও নন্দিত এবং ঐতিহ্যবাহী জঙ্গলবাধাল উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি যেন পূর্বের মতো কর্মতৎপরতা ফিরে পায়, নিশ্চিত করে ছাত্র-ছাত্রী সহ এলাকার সকল মানুষের স্বাস্থ্যসেবা এর জন্য দ্রুত সকল শুণ্যপদে দায়িত্বশীল ব্যক্তি নিয়োগ প্রদান করবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এমন দাবি এলাকার সকল সচেতন মানুষের।