বাংলা সিনেমায় বাবা

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

একাত্তর নিউজ ডেস্ক :

বাংলা চলচ্চিত্রে বাবাকে নানাভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। তারা কখনো কঠোর, কখনো স্নেহময়, কখনো আদর্শবাদী আবার কখনো তারা বিপথগামী। তবে সিনেমার শেষ পর্যায়ে বাবা আর সন্তানেরা ফিরে আসে একে অন্যের কাছে। আজ বিশ্ব বাবা দিবস। বিশ্বর সকল বাবার দায়িত্ব ও হের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের স্মরণীয় বাবা চরিত্রগুলো নিয়ে এই আয়োজন সাজিয়েছেন ইফতেখার শুভ

বাংলা চলচ্চিত্রে বাবা-ছেলের ভূমিকায় দ্বৈত অভিনয় করেছেন উত্তম কুমার, রাজ্জাকসহ আরও কয়েকজন অভিনেতা। আবার বাস্তবজীবনে বাবা ও সন্তান চলচ্চিত্রে এসেছেন এমনও বিরল নয়।

বাংলাদেশের নায়করাজ রাজ্জাকের দুই ছেলে বাপ্পারাজ ও সম্রাট সিনেমায় এসেছেন। বাবা গোলাম মুস্তাফার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অভিনয়ে এসেছেন সুবর্ণা মুস্তাফা। আবুল হায়াত এবং বিপাশা হায়াত চলচ্চিত্রের পর্দাতেও হয়েছেন বাবা-মেয়ে। সোহেল রানার ছেলে ইয়ুলও অভিনয় করছেন সিনেমায়। প্রখ্যাত অভিনেতা ও নির্মাতা আমজাদ হোসেনের ছেলে সোহেল আরমান অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। ওমর সানী-মৌসুমীর ছেলে ফারদীন আত্মপ্রকাশ করেছেন চিত্রপরিচালক হিসেবে। পশ্চিমবঙ্গে ও বলিউডে ষাটের দশকের প্রখ্যাত নায়ক বিশ্বজিতের ছেলে প্রসেনজিৎ খ্যাতিতে বাবাকে ছাড়িয়ে গেছেন।

বাবাকেন্দ্রিক সিনেমার প্রসঙ্গে প্রথমেই মনে পড়ছে ‘বাবা কেন চাকর’ সিনেমাটির নাম। এখানে আদর্শবাদী এবং বৃদ্ধ বয়সে সন্তান দ্বারা নিপীড়িত বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন রাজ্জাক। ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি ব্যবসাসফল হয়। ছবিটির পরিচালক ছিলেন রাজ্জাক এবং প্রযোজনায় ছিল রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন। ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ সিনেমায় স্ত্রীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন বুলবুল আহমেদ একক বাবা হিসেবে শিশুসন্তানকে বড় করে তোলেন। এ সিনেমার ‘বাবা বলে গেল’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায় আশির দশকে। ‘নয়নের আলো’ সিনেমায় ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’ এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর আর পর্দায় ছিলেন প্রয়াত জাফর ইকবাল। মাসুদ আখন্দ পরিচালিত ‘পিতা’ সিনেমাটি গ্রামীণ পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনীকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প অবলম্বনে নির্মিত মান্না অভিনীত ‘কাবুলীওয়ালা’ সিনেমায় শ্বাশত পিতৃত্বের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ষাটের দশকে পশ্চিম বাংলাতেও নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। কাবুলীওয়ালার ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন ছবি বিশ্বাস। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘বাপ বেটির যুদ্ধ’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন রাজ্জাক, আলমগীর, শাকিব খান ও পপি। সিনেমাটিতে বাবা-মেয়ের দ্বন্দ্ব কাহিনীর গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। ‘দীপু নাম্বার টু’ সিনেমায় একক বাবা বুলবুল আহমেদের সঙ্গে তার সন্তানের সম্পর্ককে তুলে ধরা হয়েছে। ‘দ্য ফাদার’কে বলা হয় বাংলাদেশে নির্মিত বাবাকেন্দ্রিক ক্ল্যাসিক সিনেমা। কাজী হায়াৎ পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাতে বিদেশি শ্বেতাঙ্গ জন বাংলাদেশের একটি শিশুকে লালন পালন করেন পিতৃস্নেহে। খুকু বড় হয়ে উঠলে বাবা-কন্যার সম্পর্কের টানাপড়েন দেখা দেয়। এ ছবিতে জনের একটি বিখ্যাত সংলাপ ‘এত বছর বাংলাদেশে থাকিয়াও আমি বাঙালি হইতে পারি নাই, খুকুর বাবা হইতে পারি নাই’। খুকুর ভূমিকায় সুচরিতা এবং জনের ভূমিকায় জন নেপিয়ার এডামস অভিনয় করেন। এ সিনেমায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত ‘আয় খুকু আয়’ গানটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।

ওপার বাংলায় ‘আনন্দ আশ্রম’ বাবা ও সন্তানের সম্পর্ককেন্দ্রিক এক জনপ্রিয় সিনেমা। বাবার (অশোক কুমার) অমতে প্রেমিকা শর্মিলা ঠাকুরকে বিয়ে করায় বাড়ি থেকে চলে যেতে হয় উত্তম কুমারকে। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে স্ত্রীর মৃত্যু হলে নবজাত শিশুকে বাবার কাছেই পাঠিয়ে দেন উত্তম। ছেলে রাকেশ রোশনের বিয়ে উপলক্ষে বহু বছর পর নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন উত্তম। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে খ্যাতির শীর্ষে থাকার সময় দরিদ্র ও অসহায় বাবার ভূমিকায় মর্মস্পর্শী অভিনয় করে দর্শককে আলোড়িত করেন উত্তম কুমার ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ সিনেমায়। ছেলেটি যখন ছোট তখন খুনের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে জেলে যান নিরপরাধ বাবা। বাবা ছবি বিশ্বাসের জন্য ছেলে উত্তম কুমারের আইনি লড়াইয়ের কাহিনী নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সবার উপরে’।

এক সময় পর্দায় দাপুটে বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফতেহ লোহানী, খলিল, গোলাম মুস্তাফা, দারাশিকো, আবদুল মতিন। আদর্শবাদী বাবার ভূমিকায় মানানসই ছিলেন আনোয়ার হোসেন ও প্রবীর মিত্র। পরবর্তীকালে রাজীব, আহমদ শরীফ খলনায়ক থেকে রাগী বাবার ভূমিকায় দর্শকপ্রিয়তা পান। পশ্চিমবঙ্গে দাপুটে ও রাশভারী বাবার ভূমিকায় ছবি বিশ্বাস, কমল মিত্র, উৎপল দত্ত ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। স্নেহময় বাবার ভূমিকায় মানানসই ছিলেন পাহাড়ী সান্যাল, কালী ব্যানার্জি। পরবর্তীকারে দীপংকর দে, হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়, অনীল চট্টোপাধ্যায়, বাবার ভূমিকায় সার্থক অভিনয় করেছেন।

Please follow and like us: