বিদেশে লবিস্ট নিয়োগে দেশের ভাবমূর্তির ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

শেখ গফ্ফার রহমান, স্টাফ রিপোর্টারঃ

বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ দেশের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। এতে বিদেশের ওপর নির্ভরশীলতা ও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপকে উৎসাহিত করে বলেও মনে করেন তারা।

 

 

বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে সম্প্রতি বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত ২৬ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে বলেন, বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে মোট আটটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে।

 

 

২০১৪ সালে  জামায়াত একটি ফার্ম নিয়োগ করে যুদ্ধাপারাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য। আর যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য পিস অ্যান্ড জাস্টিস নামে একটি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে।

বিএনপি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চারটি ও ২০১৯ সালে একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত তিনটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে।

 

সরকারের লবিস্ট নিয়োগের অভিযোগ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,  সরকার লবিস্ট নিয়োগ করেনি। পি আর ফার্ম নিয়োগ করেছে। সরকার যেটা করেছে অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য যেগুলো ছড়ানো হয় তার বিপরীতে সত্য তথ্যগুলো জানানোর জন্য বি,জি,আর নামে একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৪-১৫ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়। সে সময় যুদ্ধাপারাধীদের বিচার বন্ধে বানোয়াট তথ্যের বিরুদ্ধে যাতে লিখতে পারে। বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা বন্ধের জন্য বিজিআরকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

 

দেশের বামপন্থী দলগুলোর নেতারা মনে করেন, লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে নিজেদের আনুকূল্য পাওয়ার চেষ্টা দেশের ভাবমূর্তির ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে দেশের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়। এর ফলে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিষয়টিকেও উৎসাহিত করা হয় বলে মনে করেন তারা। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিজের বিষয়ে বিদেশের কাছে অভিযোগ দেওয়ার এবং এ বিদেশ নির্ভর প্রবণতা শুরু হয়।

 

আবার বিদেশে এ লবিস্ট নিয়োগের ঘটনাকে বামপন্থীদের কেউ কেউ পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার কুফল হিসেবেও অভিযোগ করেন। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবসানের মধ্য দিয়েই এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব বলেই মনে করেন তারা।

 

ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিদেশের সমর্থন পেতে এ লবিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনেক সময় অসত্য তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে, যা দেশের বিরুদ্ধেই যায় বলে বামপন্থী নেতারা মন্তব্য করেন। এ লবিস্ট নিয়োগের পেছনে যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে সেটা কোথা থেকে আসছে তার তদন্ত হওয়া দরকার বলেও অনেকে মনে করছেন। আবার অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সরকার যে পিআর ফার্ম নিয়োগের কথা বলেছে তারও সমালোচনা করেন তারা।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও তারও টেলিযোগাযোগ, বে-সামরিক বিমানও পর্যাটন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের সাবেক মন্রী কমেড রাশেদ খান মেনন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ক্ষমতাসীন ও বিরোধীরা ৭৫-এর (বঙ্গবন্ধু হত্যার) পর বিদেশ নির্ভরতার দিকে ঝুকেছে। নিজেদের দিকে সমর্থন আদায়ের জন্য এটা করছে। এতই যদি প্রয়োজন হয় দলগতভাবে আরেকটি দেশের দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা যেতে পারে। কিন্তু টাকা খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ দেওয়া কেন। এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, দেশকে করে তোলে বিদেশ নির্ভর। বিএনপি, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দেশে সংগঠন আছে। তারা সেসব দেশের দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে। আর জামায়াত তো দেশের বিরুদ্ধে সবই করে। বড় কথা হলো কীসের জন্য এ লবিস্ট নিয়োগ সেটাও দেখার বিষয়। জিএসপি সুবিধা আদায়ের জন্য সেটা হতে পারে। কিন্তু তার জন্য আমাদের তো রাষ্ট্রদূত আছে। তারাই তো কাজ করতে পারে।

 

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমাদের দেশের এসব দল ক্ষমতার জন্য এটা করে তো বটেই, বিশ্বের আরও অনেক দেশের দলগুলোও এটা করে। এটা হচ্ছে পুঁজিবাদের কুৎসিত চেহারা। দেশেকে অন্যের ওপর নির্ভরশীল করে তোলা। এটা নীতি নৈতিকতা বিরোধী তো বটে, রাজনীতির জন্যও শুভ নয়। এ কেনাবেচার রাজনীতির মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে নষ্ট করা হয়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা হটানোর মাধ্যমেই কেবল এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।

 

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দলীয় স্বার্থে দেশের অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। এটা কোন প্রক্রিয়ায় হচ্ছে, কীসের জন্য হচ্ছে সেটাও দেখার বিষয়। এ টাকা কোথায় থেকে আসে এর একটা তদন্ত হওয়া দরকার। এর মধ্য দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। নিজেদের স্বার্থে মিথ্যা তুলে ধরা হয়। সেটা তো দেশের বিরুদ্ধেই যায়। এটা বন্ধ করার দায়িত্ব সরকারেরই।

Please follow and like us: