মহানবীর (সা.) আদর্শ অনুসরণেই মুক্তি

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128
আমিন ইকবাল :


আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসুল, বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব, দুজাহানের সরদার হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পৃথিবীতে আগমন আমাদের জন্য পরম খুশি ও আনন্দের। একই সঙ্গে পৃথিবী থেকে তাঁর বিদায় নেওয়া আমাদের জন্য বেদনা ও কষ্টের। আজ থেকে প্রায় পনেরশ বছর পূর্বে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে রবিউল আউয়াল মাসে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
আর ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে একই মাস ও দিনে তথা রবিউল আউয়াল মাসের সোমবারে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তবে নবীজির (সা.)-এর জন্ম ও মৃত্যু তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকদের নিকট মতানৈক্য রয়েছে। কারও মতে রবিউল আউয়াল মাসের ২ তারিখ, কারও মতে ৮ তারিখ, কারও মতে ১০ তারিখ, কারও মতে ১২ তারিখ, কারও মতে ১৭ তারিখে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের কারও মতে রবিউল আউয়ালের ১ তারিখ, কারও মতে ২ তারিখ, কারও মতে ১২ তারিখ তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেন। তবে নবীজি (সা.)-এর জন্ম ও মৃত্যু যে রবিউল আউয়াল মাসের কোনো এক সোমবার হয়েছে এ ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য সব ইতিহাসবিদ উলামায়ে-কেরাম একমত রয়েছেন। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ২/২৮২)
উল্লিখিত আলোচনার ভিত্তিতে বোঝে আসে মুসলিম উম্মাহর জন্য রবিউল আউয়াল মাস একই সঙ্গে আনন্দ ও বেদনার আবেদন রাখে। এ মাসের আগমন আমাদের হৃদয় ও মননে নবীজির প্রতি প্রেম-ভালোবাসা ও মহব্বত অন্য সময়ের চেয়ে আরও দৃঢ় করে। কিন্তু এর মানে কিন্তু এই নয় শুধু এ মাসে নবীজি (সা.)-এর প্রতি মহব্বত দেখাব, আর অন্য সময় তাকে ভুলে যাব! বরং আমাদের প্রতিজ্ঞা হতে হবে আজ থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হৃদয়ে নবীজির প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসা রাখব।
তার পথ ও আদর্শ অনুসরণ করে চলব। কারণ, তার আদর্শ অনুসরণ ও অনুকরণেই মানবজাতির মুক্তি নিহিত রয়েছে। নবীজির অসাধারণ চারিত্রিক মাধুর্য ও অনুপম ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব : ২১)। তিনি অবিস্মরণীয় ক্ষমা, মহানুভবতা, বিনয়-নম্রতা, সত্যনিষ্ঠতা প্রভৃতি বিরল চারিত্রিক মাধুর্য দিয়ে বর্বর আরব জাতির আস্থা অর্জন করেছিলেন। ফলে সবাই তাকে ‘আল-আমিন’ বা বিশ^স্ত উপাধিতে ভূষিত করেছিল। দুনিয়ার মানুষকে অর্থ বা প্রভাব-প্রতিপত্তির দ্বারা বশীভ‚ত করেননি। বরং স্বভাবজাত উত্তম ব্যবহার দিয়ে বশীভ‚ত করেছিলেন। তাই তো তার চারিত্রিক গুণাবলি সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয় আপনি সুমহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ (সুরা কলম : ৪)
মহানবী (সা.)-এর জন্ম ও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই মাসে উৎসব বা শোক পালন বড় কথা নয়; আসল কথা হলো তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা; কোরআন ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা; একমাত্র ইসলামকেই ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির অনন্য পথ হিসেবে গ্রহণ করা। পবিত্র কোরআনের ঘোষণা: ‘যা দিয়েছেন তোমাদের রাসুল (সা.), সুতরাং তা ধারণ কর; আর যা থেকে বারণ করেছেন, তা থেকে বিরত থাক।’ (সুরা: হাশর-৫৯, ৭)। আল-কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘বলুন (হে রাসুল সা.!) যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসবে, তবে আমার অনুকরণ কর; আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সুরা: বাকারা-২, ৩১)। হাদিস শরিফে আছে: ‘তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না আমি হব তার নিকট তার পিতা, পুত্র ও সব মানুষ (এবং যাবতীয় সব কিছু) থেকে প্রিয়।’(বুখারি : ১৪)
তাই আসুন, আজকের দিনে আমরা প্রতিজ্ঞা করি নবীজির প্রতিটি নির্দেশনা মেনে চলব। ঠিকমতো ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত আমল পালন করব। ঘুষ, দুর্নীতি, লোভ, হিংসা, মিথ্যা ইত্যাদি বদ কাজগুলো পরিহার করব। আল্লাহ আমাদের বোঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

Please follow and like us: