যশোরে চিকিৎসকের অবহেলায় গর্ভে সন্তানের মৃত্যুর অভিযোগ

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

জি এম অভি :  যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে দুনিয়ার আলো দেখা হলো না গর্ভে থাকা শিশুটির। ৩৭ সপ্তাহের গর্ভবতী সুমি খাতুন পেইন নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে আসলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে জীবিত সন্তানের মুখ দেখতে পাননি। এদিন সন্ধ্যার দিকে গর্ভে তার শিশুটি মারা গেলে নরমাল ডেলিভারি করানোর জন্য ওষুধ দেয়া হয়। এরই মধ্যে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সুমিকে নেয়া হয় ল্যাবজোন হসপিটালে। সেখানে গর্ভে মৃত সন্তান জেনেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়।
সুমি খাতুন (২৫) যশোর সদর উপজেলার পদ্মবিলা গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে ও গোপালগঞ্জ সদরের তারাইরপুর গ্রামের তুহিন বিশ্বাসের স্ত্রী।
হাসপাতালে কান্নারত অবস্থায় সুমি খাতুন জানিয়েছেন, গত ২৯ মে বৃহস্পতিবার ব্যথা অনুভূত হলে পরিবারের সদস্যরা তাকে দুপুরে যশোর জেনারেল হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। ভর্তি রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ২৬৬১১/৩২। এ সময় ওয়ার্ডের সেবিকারা তাকে সকল পরীক্ষা করে ভালো উল্লেখ করেন। পরে ইউনিট-২ ইন্টার্ন চিকিৎসক অনুসাকে সেবিকারা রোগীকে বুঝিয়ে দেন। পরে ইন্টার্ন চিকিৎসক অনুসা মোবাইল ফোনে অনকলে থাকা চিকিৎসক ও ইউনিট প্রধান ডা. ইলা মন্ডলকে রোগীর কথা জানান। তখন চিকিৎসক ফোনে রোগীর ব্যবস্থাপত্র ও আল্ট্রাসনো করার পরামর্শ দেন। যা ইন্টার্ন চিকিৎসক রোগীর ব্যবস্থাপত্রে লিপিবদ্ধ করেন। এরপরে বিকালে আল্ট্রাসনো রিপোর্টে শিশুটি পেটে খিললাগা অবস্থা থাকায় তিনি চিকিৎসককে ফোনে বিষয়টি অবগত করেন ইন্টার্ন চিকিৎসক। তখন ডা. ইলা মন্ডল সন্ধ্যার সময় সিজার করার সিদ্ধান্ত নেন। রোগীর স্বজনরা ওটির জন্য ওষুধ কিনেও প্রস্তুত। কিন্তু সন্ধ্যার চিকিৎসক আসলেন রাত সাড়ে নয়টার দিকে। ততক্ষণে সুমির গর্ভের মধ্যে ৩৭ সপ্তাহের নবজাতকের মৃত্যু ঘটে। বিষয়টি উপলব্ধি করে চিকিৎসক দ্রুত রোগীকে মৃত বাচ্চা নরমালে বের করার জন্য ওষুধ প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে হাসপাতালের সামনে ল্যাবজোন স্পেশালাইজ্ হসপিটালের দালাল কৌশলে রোগীর স্বজনকে বুঝিয়ে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ওই ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সুমির পেটে মৃত সন্তান জেনেও ডা. লোপাকে দিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে টাকার বিনিময়ে বিকালে সিজার করিয়ে গর্ভের মৃত সন্তান অপসারণ করেন।
এই বিষয়ে ডা. ইলা মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগী সুমি ও তার গর্ভের বাচ্চাকে নিয়ম মেনে ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়েছে। বিকালে কোনো অবহেলা করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, মায়ের রক্ত শূন্যতার কারণে পেটের বাচ্চা মারা গিয়েছে। ফলে নরমালে মৃত বাচ্চা প্রসবের জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা শেষ হওয়ার অনেক আগে একটি ক্লিনিকের দালাল রোগী ভাগিয়ে ক্লিনিকে নিয়ে সিজার করে। তিনি আরও বলেন, নিয়ম না থাকলেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ গর্ভের মৃত বাচ্চা জেনেও অবৈধভাবে সিজার করিয়ে বাচ্চা অপসারণ করিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ক্লিনিকের মালিক নামধারি কর্মকর্তা সালাউদ্দিন ও লিটন জানান, কোন দালালের মাধ্যমে ক্লিনিকে রোগী আনা হয়না। রোগী ও স্বজনরা এমনিতেই সেবা নিতে এখানে আসেন। তিনি আরও বলেন, সুমি গর্ভের ব্যথা সহ্য করতে পারছিলো না। যে কারণে হাসপাতাল থেকে ক্লিনিকে এসে সিজারের জন্য অনুরোধ করলে সুমিকে সিজার করে গর্ভের মৃত সন্তান অপসারণ করা হয়।

Please follow and like us: