যশোরে পুলিশ হেফাজতে আ’য়ামী লীগ নেতা বিপুকে নির্যাতন, উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরন-71news24

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

একাত্তর নিউজ, যশোর অফিস :

যশোরে ‘পুলিশ সদস্যকে মারপিটের অভিযোগে’ পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপুকে তুলে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে আটকের পর মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। এর আগে সোমবার রাতভর হ্যান্ডকাপ পরিয়ে চোখ বেঁধে তাকে বেধড়ক মারপিট করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন মাহমুদ হাসান বিপু।

গুরুতর অসুস্থ্য মাহমুদ হাসান বিপুকে এয়ার হেলিকপ্টারে ঢাকায় পাঠানো হয়

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, সোমবার রাত ৮টার দিকে পুলিশ লাইনে কর্মরত কনস্টেবল ইমরান সাদা পোশাকে পুরাতন কসবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এক নারীর সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় কর্মী সেখানে গিয়ে নারীর সঙ্গে গল্প করতে দেখে ইমরানের ওপর চড়াও হন। এ সময় নিজের পরিচয়পত্র দেখান পুলিশ কনস্টেবল ইমরান। একপর্যায়ে ইমরানকে শহীদ মিনার থেকে তুলে নিয়ে মারপিট  করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ইমরানকে উদ্ধার করে। এ সময় মাহমুদ হাসান বিপুসহ অভিযুক্তদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। সোমবার রাতভর আটকে রাখার পর  মঙ্গলবার বিকেলে ১৭ঘন্টা পর পুলিশ বিপুকে মুক্তি দেয়।

পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপু জানান, সোমবার শহীদ মিনার এলাকায় এক ব্যক্তি  নারী নিয়ে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় বসেছিলেন। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন তাদের মারপিট করে। হট্টগোল দেখে পাশের শেখ আবু নাসের ক্লাব থেকে তিনি এগিয়ে যান সেখানে। যেয়ে জানতে পারেন আক্রান্ত ব্যক্তি পুলিশ সদস্য। এ সময় তিনি বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। তিনি কোন ভাবেই মারপিটে জড়িত ছিলেন না। কিন্তু পুলিশ তাকে রাত পৌনে ৯টার দিকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে যায়।

 

মাহমুদ হাসান বিপু অভিযোগ করেন, পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে পুলিশ লাইনে ডিবি অফিসে আটকে রেখে রাতভর বেধড়ক মারপিট করে। তার হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে চোখ বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করে।মারের কারণে তার সারা শরীরে কালশিটে পড়ে গেছে। দুই পা ফেটে গেছে।’মঙ্গলবার বিকেলে তাকে মুক্তির পর যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। বুধবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারযোগে তাকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে।

 

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানিয়েছেন, মাহমুদ হাসান বিপু’র সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে বেদম প্রহার করা হয়েছে। তার প্রেপার, ডায়াবেটিস রয়েছে। রক্তে প্লাটিলেট এক লাখের নিচে নেমে এসেছে। চার সদস্যের মেডিকেল টিম তাকে পরীক্ষা নীরিক্ষা করেছে। মেডিকেল টিম তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছে।

 

এদিকে, মাহমুদ হাসান বিপুকে আটকের পর ওই রাতেই পুলিশ শাহীন চাকলাদার সমর্থক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৭ নেতাকর্মীর বাড়িতে ভাংচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেছেন, সোমবার মধ্যরাতে পুলিশ যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সহ সভাপতি আব্দুল খালেক,  পৌর কাউন্সিলর হাজী সুমন,  পৌর কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, জেলা যুবলীগের সদস্য মনজুর আলম, এমএম কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান এবং যুবলীগ কর্মী সোহাগের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় এই বাড়িগুলোতে ভাচুরও করে।

 

জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বলেন, ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের একাধিক টিম গভীর রাতে তার বাড়ি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ শাহীন চাকলাদার এমপির প্রেসসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করে।   সিসিটিভিতে যা ধরা পড়েছে।

 

যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানিয়েছেন, সোমবার রাতে তিনজন পুলিশ সদস্যকে আটকে রেখে মারপিট করা হয়েছে। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার এবং অভিযুক্তদের আটক করেছে। আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ হাসান বিপুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদকালে শারিরীকভাবে আঘাতের কোনো বিধান নেই। মঙ্গলবার বিকেলে নেতাদের জিম্মায় তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। মুক্তির আগ পর্যন্ত নির্যাতনের কোনো অভিযোগ ওঠেনি। এখন এই অভিযোগ করা হচ্ছে। যেহেতু অভিযোগ এসেছে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

Please follow and like us: