প্রচার শেষ, এবার ভোটের অপেক্ষা

http://www.71news24.com/2019/03/18/1128

একাত্তর ডেস্ক :  সব দলের সমান সুযোগ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, হামলা-সংঘাতের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারপর্ব শেষে এখন ভোটের অপেক্ষা।

পুরো দেশের নজর এখন রোববারের দিকে, দেশের সাড়ে ১০ কোটি ভোটার সেদিন যাদের পক্ষে রায় দেবে, আগামী পাঁচ বছর তাদের হাতেই থাকবে বাংলাদেশের শাসনদণ্ড।

অধিকাংশ নিবন্ধিত দলের বর্জনে ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার পাঁচ বছর পর এবারের নির্বাচনে সব দলকেই পাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থাকলেও রোববার উৎসবমুখর পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা বলেছে সবাই।

প্রতীক বরাদ্দের পর গত ১০ ডিসেম্বর সারা দেশে আনুষ্ঠানিক ভোটের প্রচার শুরু হয়েছিল। সেই সুযোগ শেষ হয়েছে শুক্রবার সকাল ৮টায়। তার আগে বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটেছেন প্রার্থীরা।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না।

ভোটের দিন ২৪ ঘণ্টা নির্বাচনী এলাকায় ট্যাক্সি ক্যাব, বেবিট্যাক্সি/অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো, লঞ্চ, ইজিবাইক, ইঞ্জিনবোট ও স্পিডবোট চলাচলের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকবে শনি থেকে সোম তিন দিন।

ব্যালট পেপারসহ প্রয়োজনীয় নির্বাচনী সামগ্রী জেলায় জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভোটের আগের দিন শনিবার তা রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর থেকে পৌঁছে দেওয়া হবে ভোটকেন্দ্রে।

আদালতের আদেশে বা অন্য কোনো কারণে শেষ মুহূর্তে ব্যালট পেপারে পরিবর্তন আনতে হলে তা নতুন করে ছাপাতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। তারপর তা পৌঁছে দেওয়া হবে হেলিকপ্টারে।

৩০ ডিসেম্বর রোববার দেশের ২৯৯ আসনে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে। ভোটের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন।

নিবন্ধিত ৩৯ দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলিয়ে এবার এক হাজার আটশর বেশি প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে আছেন। এর মধ্যে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ও জোটের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ছড়িয়েছে উত্তাপ। তাই নির্বাচন নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকেই যাচ্ছে।

বিএনপি ও তাদের জোট ঐক্যফ্রন্ট তাদের ভোটের প্রচারে বাধা দেওয়া, হামলা-ভাঙচুর, পুলিশি হয়রানির অভিযোগ করে আসছে শুরু থেকেই। পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে প্রধান নির্বাচন কমিশারের পদত্যাগও চেয়েছে তারা।

ভোটের মাঠ দখল করে জমজমাট প্রচার চালিয়ে আসা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকরাও হামলা-ভাংচুরের পাল্টা অভিযোগ করেছে বিএনপির বিরুদ্ধে। তাদের কয়েকজনের প্রাণও গেছে প্রতিপক্ষের হামলায়।

ভোটের মাঠে সবাই সমান সুযোগ পাচ্ছে বলে সিইসি কে এম নূরুল হুদা দাবি করে এলেও পাঁচ সদস্যের ইসিতে ভিন্নমত পোষণ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, ভোটারদের নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আসার পরিবেশ নিশ্চিত করতে সব ব্যবস্থাই তারা নিয়েছে।

সার্বিক প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, “আমার সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এত দল ও প্রার্থীর নির্বাচনে কিছুটা উত্তাপ থাকলেও কোনো উদ্বেগ নেই।”

একাদশ সংসদ নির্বাচন তথ্য

# মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ছিল ২৮ নভেম্বর, প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল ৯ ডিসেম্বর, ভোট ৩০ ডিসেম্বর।

# এক প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় ৩০০ আসনের মধ্যে রোববার ভোট হবে ২৯৯ আসনে। বাকি থাকা গাইবান্ধা-৩ আসনে ২৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ নির্ধারণ করেছে ইসি।

# ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ এবং সাতক্ষীরা-২ আসনে এবার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হবে। বাকি ২৯৩টি আসনে ভোট হবে সনাতন পদ্ধতিতে ব্যালট পেপার ব্যবহার করে।

# এ নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৩ জন। এর মধ্যে ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হজার ৩৬২ জন পুরুষ; ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১১ জন নারী।

# ৪০ হাজার ৫১টি কেন্দ্রের ২ লাখ ৫ হাজার ৬৯১টি ভোটকক্ষে এবার ভোটগ্রহণ হবে।

# ১ হাজার ৮৪৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৭৪৯ জন দলীয় মনোনয়নে এবং ৯৯ জন স্বতন্ত্র হিসেবে ভোট করছেন এবার।

# এবার জাতীয় নির্বাচনে ৬ লাখ ৬২ হাজার ১১৯ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছে। তাদের মধ্যে প্রিসাইডিং অফিসার ৪০ হাজার ১৮৩জন, সহকরী প্রিসাইডিং অফিসার ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২ জন এবং পোলিং অফিসার ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬২৪জন।

# নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তায় বিভিন্ন বাহিনীর ৫ লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে প্রায় ২ লাখ পুলিশ, দুই লাখের বেশি আনসার, ১০ হাজার র‌্যাব, ১২০০ প্লাটুন বিজিবি রয়েছে। ৩৮৯টি উপজেলায় সেনাবাহিনী এবং ১৮ জেলায় নৌবাহিনী-কোস্টগার্ড সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

# দেড় হাজার নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম মাঠে থাকছেন ভোটের মাঠে; রয়েছে ১২২টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটি। নির্বাচন পর্যবেক্ষকের সংখ্যা এবার প্রায় ২৫ হাজার।

কোন দলের কত প্রার্থী

এলডিপি ৮ (ধানের শীষ ৪), জেপি ১১ (মহাজোট ২), সাম্যবাদী দল ২, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৯ (ধানের শীষ ৪), সিপিবি ৭৪, আওয়ামী লীগ ২৬১ (নৌকা ২৭৪), বিএনপি ২৭২ (ধানের শীষ ২৯৭), গণতন্ত্রী পার্টি ৬, ন্যাপ ৯, জাতীয় পার্টি ১৭৬ (মহাজোট ২৫), বিকল্পধারা ২৫ (নৌকা ৩), ওয়ার্কার্স পার্টি ৮ (নৌকা ৫), জাসদ ১২ (নৌকা ৩), জেএসডি ১৯ (ধানের শীষ ৪), জাকের পার্টি ৯০, বাসদ ৪৫, বিজেপি ৩ (ধানের শীষ ১), তরিকত ফেডারেশন ১৭ (নৌকা ১), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ২৩, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ ৪৮, এনপিপি ৭৯, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম ৮ (ধানের শীষ ৩), গণফোরাম ২৭ (ধানের শীষ ৭), গণফ্রন্ট ১৩, পিডিপি ১৪, বাংলাদেশ ন্যাপ ৩, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১১, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ১৮, কল্যাণ পার্টি ২ (ধানের শীষ ১), ইসলামী ঐক্যজোট ২৪, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ৫, ইসলামী আন্দোলন র্ংলাদেশ ২৯৮, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ২৫, জাগপা ৪, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ২৮, খেলাফত মজলিস ১২ (ধানের শীষ ২), বিএমএল ১, মুক্তিজোট ২, বিএনএফ ৫৭ জন।

Please follow and like us: